সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ পূর্বাহ্ন
বাংলার সুবাদার মুঘল সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে শাহজাদা সুজার সঙ্গী হিসেবে এসে বর্তমান ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভারুকাঠিতে আস্তানা গড়েন শেখ আব্দুল মজিদ। নির্মাণ করেন পাকা মসজিদ। মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট। এর দেয়াল ৪২ ইঞ্চি পুরু। মসজিদের সামনে দিঘি ঘাটলা বাঁধানো।
এ দিঘির বাঁধানো ঘাটলা ও মসজিদে অভিবক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শের-ই বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক (একে ফজলুল হক) এর স্মৃতি বিজড়িত। মিয়াবাড়িতে তার নিকটাত্মীয় হওয়ায় এখানে বেড়াতে এসে দিঘীতে গোসল, মসজিদে নামাজ, খেলার সাথী গাবগাছটিও রয়েছে। স্থানীয়রা এসক স্মৃতিকে রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।
জানাগেছে, ঝালকাঠি সদরের গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভারুকাঠি গ্রামের সুপ্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর আকর্ষণ মিয়াবাড়ি মসজিদ। এটি ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদ থেকে ৩০কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মসজিদটি। মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ। এ মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট। মসজিদটি দেখতে অনেক সুন্দর ও কারুকার্যমন্ডিত।
মসজিদজুড়ে চমৎকার নকশার কাজ রয়েছে। মূল মসজিদের রয়েছে তিনটি দরজা। মসজিদের চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে ছোট বড় পাঁচটি মিনার। মিনারগুলোতেও সুন্দর কারুকার্যময় নকশা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হয়েছে। মসজিদের মাঝখানে রয়েছে বড় তিনটি গম্বুজ। মধ্যের গম্বুজটি সবচেয়ে বড়। যার ভিতরের অংশেও রয়েছে কারুকার্যময় সুন্দর নকশার সমাহার।
মসজিদটি নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে জনশ্রæতি রয়েছে, ‘মিয়াবাড়ি মসজিদটি বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত একটি মসজিদ। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা শাহজাদা সুজা এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মিয়াবাড়ি মসজিদের পূর্ব পাশে কয়েক একর নিয়ে বিশাল একটি দীঘিও রয়েছে, যা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরো নয়নাভিরাম করে তুলেছে। মসজিদটি প্রাচীনকালে ইসলামপ্রিয় মানুষের রুচি ও স্থাপত্য শিল্পের সৌন্দর্য বর্ধনে সুউচ্চ মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
প্রবীণ ব্যক্তিত্ব নেছার উদ্দিন আহমেদ জাহাঙ্গির মিয়া (৮৩) জানান, মসজিদ নির্মাণের সঠিক সময় বলতে না পারলেও ৫শত বছর পূর্বে এ এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করেন তিনি। মসজিদ এবং দিঘী একই সময় নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় গোলাম মহিউদ্দিন নামে এক ভাই নেককার বান্দা ছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখে কবরস্থান বাধিয়েছেন।
আল্লাহর ওলির সাথে আল্লাহর ওলির যোগাযোগ আছে বলেই তিনি মসজিদ সংলগ্ন কাঠাল গাছের গোড়া থেকে সবকটি করবস্থানই বাধাই করে রেখেছেন। শেরেই বাংলা একে ফজলুল হক আমার দাদার খালাতো ভাইর ছেলে। পাকিস্তান আমলের মন্ত্রী পিরোজপুরের বাসিন্দা খান বাহাদুর আফজাল’র মাতুল বাড়ি এটাই। ফজলুল হক ও খান বাহাদুর আফজাল’র অনেক স্মৃতি রয়েছে মসজিদ ও ঘাটলায়।
ঝালকাঠি কলেজ মোড় গিয়ে বাস যোগে নবগ্রাম যেতে হবে, এর পরে টেম্পু যোগে গুদিগাটা নামতে হবে, এর পরে একটু ভিতরে বামে গিয়ে এই ভারুকাঠি মিয়া বাড়ী তিন গম্বুজ বিশিষ্ট জামে মসজিদ।